ঢাকাশনিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরো
  6. ইসলামিক
  7. কবিতা
  8. কৃষি সংবাদ
  9. ক্যাম্পাস
  10. খাদ্য ও পুষ্টি
  11. খুলনা
  12. খেলাধুলা
  13. চট্টগ্রাম
  14. ছড়া
  15. জাতীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

উপন্যাস : যু‌দ্ধের দামামা | শাওন খন্দকার (পর্ব- ০১) আত্মরক্ষা এবং যু‌দ্ধ

দৈনিক বাংলা নিউজ
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪ ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

লেখক : শাওন খন্দকার [ ক‌বি- সা‌হিত‌্যিক এবং বিশ্লেষক ]

 

ভোর পাঁচটা বা‌জে, প্রতি‌দি‌নের ম‌তো ফজ‌রের আযা‌ন শুনে ঘুম‌ থে‌কে উঠলাম। অজু ক‌রে দুই রাকাত ফরজ নামাজ প‌ড়ে রু‌মে আস‌তেই ম‌নে হ‌লো চার‌দিক যে‌নো আলো‌কিত হ‌য়ে গে‌ছে। বারান্দা দি‌য়ে বাইরে তাকা‌তেই আকা‌শে ধুম‌কেতুর ম‌তো কিছু একটা ছু‌টে আস‌তে দেখলাম, যেটার আলো‌য় আলো‌কিত হ‌য়ে গে‌ছে চার‌পাশ। জি‌নিসটা আস‌লে কি ? সেটা ভাব‌তে ভাব‌তেই মুহূর্তের ম‌ধ্যে বিকট শব্দে কেঁপে উঠ‌লো সব‌কিছু। বুঝ‌তে বা‌কি রইলো না শত্রুরা আমা‌দের উপর মিসাইল হামলা ক‌রে‌ছে। বাতা‌সে পোড়া গন্ধ, পা‌শের এলাকা দাউ-দাউ করে জ্বল‌ছে, মানু‌ষের চিৎকার আর্তনাদে ভারী হ‌য়ে গে‌ছে আকাশ বাতাস। সবাই ছোটাছুটি কর‌ছে। এমন পরিস্থিতিতে কি কর‌বে, কোথায় যা‌বে, কেউ কিছু জা‌নে না। আমি নিশ্চুপ ভা‌বে দাঁড়িয়ে আছি। আমি নি‌জেও জা‌নিনা এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে কি কর‌বো। আব্বু-আম্মু আর ছোট বোনটার জন‌্য খুব চিন্তা হ‌চ্ছে। আল্লাহ জা‌নেন তা‌দের ভাগ্যে কি ঘ‌টে‌ছে ! তারা কি প‌রি‌স্থি‌তি‌তে আছে ! এসব ভাব‌তে ভাব‌তেই হঠাৎ কা‌নে আস‌লো যুদ্ধ বিমা‌নের আওয়াজ এবং বোমা বর্ষণের বিকট শব্দ। আমি দৌড়ে গা‌ড়ি পা‌র্কিং এর জন‌্য বানা‌নো আন্ডার গ্রাউন্ড টা‌নে‌লে ঢু‌কে পরলাম। বিস্ফোরণের পরই বিদ্যুৎ এবং ইন্টার‌নেট সং‌যোগ চ‌লে গে‌ছে। বিকট শব্দ আর টা‌নে‌লের ঘুটঘুটে অন্ধকারে দম বন্ধ হ‌য়ে যাওয়ার ম‌তো অবস্থা। হঠাৎ ‌চোখ ঝাপসা হ‌য়ে গে‌লো, শরীর অবশ হ‌য়ে গে‌লো। এভা‌বে কতক্ষণ অ‌চেতন অবস্থায় প‌রে ছিলাম জা‌নিনা। জ্ঞান ফিরতেই ধ্বংসস্তূপের ভিতর থে‌কে উপ‌রে উঠে আসলাম। সব‌কিছু ধ্বংস হ‌য়ে গে‌ছে, আকা‌শে চিল আর শকুন উড়‌ছে, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন লাশগু‌লো প‌ড়ে আছে, বাতা‌সে লা‌শের গন্ধ। একটা ম‌হিলার লা‌শের পা‌শে ব‌সে ছোট্ট একটা বাচ্চা কান্না কর‌ছে। আমারও চিৎকার ক‌রে কাঁদতে ইচ্ছা হ‌চ্ছে, ত‌বে প্রতি‌শো‌ধের আগু‌নে চো‌খের পা‌নি শু‌কি‌য়ে গে‌ছে। শোক শ‌ক্তি‌তে পরিণত হ‌য়ে‌ছে। আমি বাচ্চাটা‌কে কো‌লে তু‌লে নিলাম। বোমা বর্ষণ এবং বিস্ফোরণের শব্দ এখন অ‌নেকটা থে‌মে গে‌ছে। সিদ্ধান্ত নিলাম গ্রা‌মে আব্বু-আম্মুর কা‌ছে যাব।

উত্তর-প‌শ্চিম‌ দি‌কে যাত্রা শুরু করলাম। প‌থে আমার ম‌তো আরো অ‌নেক মানুষ পেলাম, যারা শহর ছে‌ড়ে গ্রা‌মের দি‌কে যা‌চ্ছে। সবাই কাউকে না কাউকে হা‌রি‌য়ে‌ছে। সবার ম‌নেই চাপা ক্ষোভ। আব্বু-আম্মুর জন‌্য খুব চিন্ত‌া হ‌চ্ছে, ছোট বোনটার কথাও খুব ম‌নে পড়ছে। শত্রুরা মোবাইল নেটওয়ার্ক সি‌স্টেম ধ্বংস ক‌রে দি‌য়ে‌ছে। চাইলেই এখন আর তা‌দের সা‌থে যোগাযোগ করা সম্ভব না। রাস্তায় কো‌নো গা‌ড়ি নাই। পা‌য়ে হেঁটে আমরা আমা‌দের গন্তব্যের দি‌কে যা‌চ্ছি। আকা‌শে বিমা‌নের শব্দ শুন‌লেই সবাই ঝোপ-ঝাড়ে গি‌য়ে লু‌কি‌য়ে প‌রে, মা‌টি‌তে শু‌য়ে প‌রে। শত্রুরা শহর অঞ্চল‌কে টা‌র্গেট ক‌রে হামলা চালা‌চ্ছে। সেজন‌্য আমরা মেইন রাস্তা দি‌য়ে না গি‌য়ে গ্রা‌মের ছোট রাস্তা, বন-জঙ্গল এবং নদীপথ দি‌য়ে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা কর‌ছি। মা‌ঝে মা‌ঝে ছোট মোটরযানে করে আগ্রসর হ‌চ্ছি। যোহ‌রের নামা‌জের সময় হ‌ওয়ায় আমরা নামা‌জের জন‌্য যাত্রা বিরতি দিলাম। সবাই মি‌লে জামা‌তে নামাজ পড়লাম এবং মোনাজাত করলাম। হ‌তে পা‌রে এটাই আমা‌দের জীব‌নের শেষ নামাজ। নামাজ প‌ড়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম। পরের দিন সকা‌লে শত্রুরা আমা‌দের উপর বিমান হামলা শুরু কর‌লো। আক্রমণ থে‌কে বাঁচ‌তে আমরা ঝোপ-ঝাড়ে আশ্রয় নিলাম এবং গু‌লি লাগা থে‌কে বাঁচ‌তে মা‌টি‌তে শু‌য়ে পড়লাম। আমা‌দের ম‌ধ্যে অ‌নে‌কে শ‌হীদ হ‌লো। তা‌দের কবর দি‌য়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম। প্রথম দি‌কে এসব দে‌খে আমা‌দের সা‌থে থাকা বাচ্চারা কান্না কর‌তো, এখন আর বাচ্চারা কাঁ‌দে না।

আমরা মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ের ভিতর দি‌য়ে যা‌চ্ছি। শাল-গজারি ব‌নের ভিতর দি‌য়ে হাট‌তে খুব কষ্ট হ‌চ্ছে। কা‌ফেলার নারী-‌শিশু‌দের অবস্থা খুব খারাপ। তবুও উঁচু-নিচু এই জঙ্গ‌লের পথ পা‌ড়ি দি‌তে হ‌বে। কারণ শত্রুরা স্যাটেলাইটের মাধ‌্যমে সব‌কিছু দেখ‌ছে। খোলা জায়গার ‌চে‌য়ে বন-জঙ্গল আমা‌দের জন‌্য বে‌শি নিরাপদ। ক্লান্ত হ‌য়ে কিছু সম‌য়ের জন‌্য যাত্রা বির‌তি দিলাম। প‌থে স্থানীয় একজন আমা‌দের চাল-ডাল দি‌য়ে‌ছি‌লো। আমরা মা‌টি খুঁড়ে চুলা বা‌নি‌য়ে সেটা দি‌য়ে খিচুড়ি রান্না ক‌রে খেলাম। ম‌নে হ‌চ্ছিলো পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে সুস্বাদু খাবার খা‌চ্ছি। টাঙ্গাইলের রাবার বাগা‌নের ভিতর দি‌য়ে যাওয়ার সময় আমা‌দের সা‌থে দুজন যুবক যোগ দি‌লো। একজন আমার গ্রা‌মের বন্ধু, ঢাকা বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের মেধাবী ছাত্র ইয়া‌সিন এবং আরেকজন তার বন্ধু তাও‌হিদ। ইয়া‌সিনকে দেখার পর বু‌কে সাহস ফি‌রে পেলাম। ও‌দের কা‌ছে একটা প‌্যা‌কে‌টে রাইফেল এবং সাবমেশিন গান (এসএম‌জি)। আমি সেখান থে‌কে একটা রাইফেল হা‌তে তু‌লে নিলাম। আমরা তিন বন্ধু আল্লাহর না‌মে শত্রু‌দের ধ্বংস করার শপথ নিলাম।

এভা‌বে এগা‌রো দিন যাওয়ার পর আমরা যমুনা নদীর পা‌রে গিয়ে পৌঁছালাম। নদী পার হ‌লেই আমা‌দের বা‌ড়ি। স্থানীয় একজ‌নের সহযোগিতায় আমরা ট্রলা‌রের ব‌্যবস্থা ক‌রে ফেললাম। ট্রলা‌রে নদী পার হওয়ার সময় সিরাজগঞ্জ শহ‌রের দি‌কে চোখ প‌রে। হঠাৎ কোথা থেকে যেনো একটা ড্রোন উড়ে এসে বি‌ল্ডিং এর উপর আছড়ে পড়‌লো। মুহূর্ত‌েই বিকট বিস্ফোরণে ‌বি‌ল্ডিংটা ধ্বংস হ‌য়ে গে‌লো। আমরা সবাই আঁতকে উঠে ট্রলা‌রের পাটাতনে আশ্রয় নিলাম। মা‌ঝে মা‌ঝে মাথার উপর দি‌য়ে শা-শা ক‌রে বোমা ফেল‌তে ফেল‌তে যুদ্ধ বিমান উড়ে যা‌চ্ছে। বিকট শ‌ব্দে মা‌টি কেঁপে উঠ‌ছে, পা‌নি‌তে স্রোতের মাত্রা বে‌ড়ে গে‌ছে, ট্রলার দুলছে, থে‌মে থে‌মে মিসাইল হামলা হ‌চ্ছে। খোলা আকা‌শের নি‌চে ট্রলা‌রে ক‌রে নদী পার হওয়া এখন আমা‌দের জন‌্য নিরাপদ না। তাই আমরা যমুনা নদীর চ‌রে আমা‌দের ট্রলার নোঙর করলাম। প‌রের দিন আমরা যমুনার চর‌কে বিদায় দি‌য়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম। প‌রিবা‌রের কথা ভে‌বে খুব চিন্তা হ‌চ্ছে। প‌থে একজ‌নের কা‌ছে শুনলাম আমা‌দের গ্রা‌মে এখ‌নো শত্রুরা হামলা ক‌রে নাই। ম‌নে কিছুটা স্বস্তি ফি‌রে পেলাম। বা‌ড়ি‌তে গি‌য়ে আব্বু-আম্মু আর ছোট বোন‌কে দে‌খে ম‌ন প্রশান্ত হ‌লো। আমা‌কে দেখার পর তা‌দের চো‌খে আনন্দের অশ্রু। আব্বু-আম্মু‌কে বললাম,”এখন আমা‌দের আত্মরক্ষা এবং যু‌দ্ধের প্রস্তু‌তি নি‌তে হ‌বে।” শুকনা খাবার সংগ্রহ এবং মা‌টির নি‌চে টা‌নেল বানা‌নোর কাজ শুরু ক‌রে দিলাম।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
%d bloggers like this: