চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।
চট্টগ্রাম পটিয়া ধলঘাট ইউনিয়নের নন্দেরখীল বাগদন্ডী এলাকাবাসীদের হয়রানির অভিযোগে ভূমি কর্মকর্তা দিদারুলের বিরুদ্ধে নন্দেরখীল বাগদন্ডী দুই গ্রামের ভোক্তভূগী জনগণ প্রতিকার চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গণস্বাক্ষর করা একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
লিখিত এই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,পটিয়ার ধলঘাট ইউনিয়নের নন্দেরখীল বাগদন্ডী এলাকাবাসীদের একজন দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ দিদারুল আলম,এলাকাবাসীদের মামলা হামলা ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ঐ ভূমি কর্মকর্তা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার টিসির হাট ইউনিয়নের ভূমি অফিসের উপ সহকারী দিদারুল আলম এর বিরুদ্ধে। গত ২২ অক্টোবর শতাধিক নারী-পুরুষ এলাকাবাসীরা তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পটিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নিকট প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আবুল কালাম পটিয়া উপজেলা ১০ধলঘাট ইউনিয়ন এর বাগদন্ডী নন্দেরখীল গ্রামের কিছুদিন পূর্বে এসে বসতিস্থাপন করে স্থায়ী ভাবে বসবাসরত আছে। আবুল কালাম অনেকবার মুক্তিযোদ্ধার জন্য বোয়ালখালী আবেদন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাতে নাম না থাকার কারনে উনি মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানাতে পারেননি। পরে পটিয়াতে এসে তিনি স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর বিভিন্ন লবিং করে অবৈধ পন্থায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকা ভূক্ত হয়ে ঐ সনদমুলে উনার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী সুযোগ করিয়ে দেন। কিন্তু চট্টগ্রাম পটিয়াতে এবং বোয়ালখালীতে প্রবীণ মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত উনি নাকি কখনো কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেননা। তৎমধ্যে ছেলে মোঃ দিদারুল আলম চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার টিসির হাট ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন। ইতিপূর্বে সে সাতকানিয়া লোহাগাড়া, হাটহাজারী, পটিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ ষোল বছর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামীলীগের সাথে যুক্ত থেকে প্রতিটি কর্মস্থলে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি করে কোটিপতি হয়েছেন এবং এর আগের প্রতিটি কর্মস্থল থেকে তাকে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মানুষের আবেদন নিবেদনের কারনে তাকে বারবার বদলী হয়ে নিজ কর্মস্থল থেকে অপমানিত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। এই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী পাওয়া মোঃ দিদারুল আলম, উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন কালে দূর্নীতি করে কোটি টাকার মালিক হয়ে এবং তিনি যেহেতু অফিসের কর্মকর্তা সেই সুবাদে সে কিভাবে কোন কৌশলে ভূমির বৈধ অবৈধ কাগজপত্র বানাতে হয়, সে ভালো করেই জানেন। অন্য দিকে তার রয়েছে কোটি কোটি টাকার জোড়। সবকিছু মিলে দিদারুল আলম একজন ভূমিদস্যু ও আমাদের এলাকায় আতঙ্কের নামে পরিচিতি লাভ করে এবং নামে বেনামে কিনেছেন বিভিন্ন জায়গায় কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। সম্পত্তি কেনা যেন তার নেশায় পরিনত হয়েছে।
সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর পর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দিদারুল আলম তার নামের সম্পত্তিগুলো স্ত্রীসহ বিভিন্ন নিকট আত্মীয়ের নামে আতঙ্কে হস্তান্তর করা শুরু করেন। তারই ধারাবাহিতায় সে আমাদের নন্দেরখীল বাগদন্ডী দুই গ্রামের খরিদকরা মানুষের একমাত্র কেন্দ্রীয় কবরস্থান বা মৃত্যুর পর কবর দেওয়ার জায়গা কবরস্থান গোপনে ক্রয় করেছে বলে দখল দেওয়ার চেষ্টা করে। এ কবরস্থানে পাশে একই দাগে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দিদারুল আলম কোশেয়ার এর নামে ঐ কবর স্থান ক্রয় করার জন্য সরকারি অফিসে ফি জমা করে। একথা যখন এলাকায় জানাজানি হয় দুই গ্রামের মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করলে এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দিদারুল আলম তড়িঘড়ি করে সরকার পরিবর্তনের পরপরেই ধলঘাটেট পাশ্ববর্তী দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নের ডেঙ্গাপাড়া গ্রামের মৃত মনির আহম্মদ এর ছেলে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সন্ত্রাসী ফরিদ আহম্মদের মাধ্যমে তার ভাইপো মাইমুল হাসান চৌধুরীকে উক্ত কবরস্থানের জায়গাটি ক্রয়-বিক্রয় ও দেখভাল করার জন্য ক্ষমতা অর্পন করেন (পাওয়ার)। এমতাবস্থায়, ঐ আওয়ামীলীগের নেতা ফরিদ আহম্মদ ও তার ভাইপো মাইমুল হাসান চৌধুরী মোটর সাইকেল যোগে এসে এলাকা শোডাউন দিয়ে এসে কবরস্থান কমিটি ও এলাকাবাসীকে প্রতিনিয়ত হত্যা ও গুম করার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। শুধু এ হুমকি-ধমকি দিয়ে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দিদারুল আলম ক্লান্ত হননি। এরই মধ্যে কবরস্থান কমিটি ও এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি যারা কবরস্থান নিয়ে কথা বলতেছে তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয় সহ বিভিন্ন জায়গায় হয়রানী করার জন্য একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছেন। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে সীতাকুন্ড থানায় একটি কবরস্থান কমিটির নামে গায়েবী মামলা দাখিল করে পটিয়া থানাকে তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করেন। এলাকাবাসীরা তার বিরুদ্ধে সঠিকভাবে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জন্য প্রশাসনের নিকট দাবী জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার মহিউদ্দিন জানান, ধলঘাট ইউনিয়নের নন্দেরখীল বাগদন্ডী এলাকায় মোঃ আবুল কালাম নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তবে কিভাবে হয়েছেন তা তিনি জানেন না। পটিয়ায় ৪০ শতাংশ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে, এদের কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ অবহেলিত। তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম নিকট দাবী জানান সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনা অনুরোধ জানান।