স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইল কালিহাতী প্রতিনিধি:
টাংগাইল কালিহাতীতে অপহরণের শিকার হাওয়া ব্যবসায়ী আমির হামজা দীর্ঘ ১৫ দিন ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা নেয়ার পর কিছুটা সুস্থ হয়েছেন বলে প্রকাশ করেছেন অপহরণকারী। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমির হামজা তার স্ত্রী সন্তানের প্রাণনাশের হুমকি থাকায় সে টাংগাইল শহরে একটি ভাড়া বাসায় এসে উঠেন। ব্যবসায়ী আমির হামজাকে কি জন্য অপহরণ করা হয়েছিল এবং অপহরণের পরে তার সাথে কি করা হয়েছে সেই বিষয়টি গনমাধ্যমে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন এবং সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে অপহরণের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী নিজেই। আমি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী- আমি আমির হামজা টাংগাইল জেলা কালিহাতী উপজেলার নালিয়া চালা গ্রামে ১৯৮২ সালে জন্ম গ্রহণ করি। আমার জন্মের ৮ বছর বয়সে আমার বাবা ও মায়ের মাঝে অমিল তৈরি হওয়াতে আমার বাবা ও মা সেপারেট হয়ে যায়। এর পর ০৫ জানুয়ারি ১৯৯০ সাল থেকে আমার আশ্রয় হয় ঢাকার JAMIA ARABIA KHADIMUL ISLAM MIRPUR এতিমখানায়। এই এতিমখানা আমার থাকা খাওয়া লেখা পড়া পোশাক সমস্ত খরচ বহন করে। আমি ঐ এতিমখানায় থেকে টানা দশ বছর লেখাপড়া করি। ১৯৯৫ সাল থেকে লেখা পড়ার পাশাপাশি একটি জামাকাপড়ের দোকানে চার ঘণ্টা করে কাজ করি। এর পর ২০০০ সাল থেকে ঐ দোকানে ফুল টাইম কাজ করা শুরু করি। পরবর্তীতে ২৪/১০/২০০৫ সালে আমি সৌদি আরব চলে যাই। সৌদি আরবে জেদ্দায় মোহাম্মদ সাঈদ মার্কেটে ঘরের পর্দা সোফা সেটের কভার টেবিল মেটস্ এর দোকানে কাজ করি। একাধারে তিন বছরের বেশি সময় কাজ করার ধারাবাহিকতায় আমার ব্যবসায়ীক আইডিয়া হয়। ২০০৯ সালের শুরুতে আমি নিজে একটা দোকান বাড়া নিয়ে ঘরের পর্দা সোফা সেটের কভার টেবিলের কাপড় এর ব্যবসা শুরু করে ব্যবসায় লাভবান হই। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে একই রকম আরো একটি দোকান চালু করি। ব্যবসা অনেক ভালো চলছিলো। হঠাত ২০১৯ সালে মহামারী করোনায় আমার সমস্ত ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ২০১৯ নভেম্বর ১১.তারিখে বাংলাদেশে চলে আসি। কিছু দিন পর আমি সিদ্ধান্ত নেই যে এবার দেশেই ব্যবসা করব।
কালিহাতী উপজেলার মরিচা বাজারে ২০২০ সালে AK fashion ghalary নামে একটি দোকান এবং AK sendel নামে একটি জুতার কারখানা চালু করি। দোকান ও কারখানা চালু করতে গিয়ে স্থানীয় একটি চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী বাপ্পী বাহিনী কে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরুর কিছু দিন পর থেকেই অনেক ভালো চলছিলো। এটা দেখে ঐ চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী বাপ্পী বাহিনী ২০২১ এসে আমার কাছে ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি নিরুপায় হয়ে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দিয়ে তাৎক্ষণিক আপস করি। ২০২১ সাল আমার ব্যবসা আরো অনেক সাফল্য অর্জন করি কিন্তু ঐ চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী বাপ্পী বাহিনী আমার পিছু ছাড়ে নি। ২০২২ সালে ফেব্রয়ারীতে আমার কাছে অনেক বড় আকারে ১০ লক্ষ্য টাকা চাঁদা দাবি করেন ঐ চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী বাপ্পী বাহিনী। আমি এতো টাকা চাঁদা দিতে পারবনা বলে জানিয়ে দেই। তার পর থেকে তারা আমাকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল চাঁদার টাকার জন্য বাপ্পী বাহিনীর প্রধান বাপ্পী নিজেই। ২০২২ সালে ১৫ মার্চ তারিখ রাত ১০.৩০.মিনিটে আমি আমার দোকান এবং জুতার কারখানা বন্ধ করে প্রতিদিন এর মতো নিজের মোটরসাইকেল করে বাসায় ফেরার সময় রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে আমাকে আটকায় ঐ চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী বাপ্পী বাহিনী। ওরা সংখ্যায় ৮ জন ছিলো ওদের সাথে ৩টি মোটরসাইকেল এবং একটি সাদা প্রাইভেট কার ছিলো। ওরা আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রথমে আমার মোটরসাইকেল এর চাবি নিয়ে নেয় এর পর আমার সাথে থাকা একটি মোবাইল ও নগদ এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেল নিয়ে নেয়। এর পর প্রথমে আমার হাত বাঁধে পরে চোখ বাঁধে পরে ওদের সাথে থাকা গাড়িতে উঠায় এর পর আমাকে কোথায় নিয়ে যায় আমি কিছুই দেখিনি। ওরা যখন আমার চোখ খুলে দেয় আমি দেখতে পেলাম ওরা আমাকে একটি বিল্ডিং এর আন্ডার গ্রাউন্ড ফ্লোরের খুঁটির সঙ্গে বাধা অবস্থায় আমি। পর দিন ১৬ মার্চ থেকে আমার উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। বার বার আমার নাকে মুখে বিষাক্ত গ্যাস স্প্রে করে। ওদের দাবি পূরণ না করায় ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে কয়েক দফায় আমার শরীরে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। ১৮ তারিখ শুক্রবার দিন রাতে আমার উপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি আমার স্ত্রী সন্তান কে অপহরণ করে উঠিয়ে আনার হুমকি দেয়। আমি ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে এক পর্যায়ে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন অপহরণ কারি সন্ত্রাসী বাপ্পী বাহিনীর প্রধান বাপ্পী নিজেই দলিল লেখার স্ট্যাম্পে আমার আংগুলের ছাপ এবং স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীরা তখন খুশি হয়ে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে আজ থেকে তোর সমস্ত ব্যবসা দোকান এবং জুতার কারখানা আমাদের, তোকে আমরা ছেড়ে দিবো তবে এক শর্তে , তুই এবং তোর স্ত্রী সন্তান সহ এ এলাকা ছেড়ে চলে যাবি, কোন প্রকার মামলা করার চেষ্টা করবি না। মামলা করার চেষ্টা করলে তোকে এবং তোর স্ত্রী সন্তান সহ মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিব। এর পর থেকে আমি ও আমার স্ত্রী সন্তান সহ পালিয়ে পালিয়ে দিন রাত পার করতেছি। এই অপহরণকারী সন্ত্রাসী বাপ্পী বাহিনীর মরিচা বাজার এলাকায় স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার থাকায় আমার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। তাই আমি এই গনমাধ্যম কর্মি ভাইদের মধ্যেমে আমার দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ন্যায় বিচারের দাবীর পাশাপাশি আমার এবং আমার স্ত্রী সন্তানের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি। এই গণমাধ্যম এর মধ্যেম আমার দেশের প্রধান মন্ত্রীর কাছে আশ্রয় ও জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি ।